সন্ন্যাস ত্যাগ করে কারা হতেন রাজার গুপ্তচর?

 যে সময়ের কথা আলোচনা করা হচ্ছে সেই সময়ে বর্ণাশ্রম এবং চতুরাশ্রম এই দুই প্রথাই যথেষ্ট সুস্পষ্ট ভাবে সমাজে প্রচলিত ছিল। সেই সময়কার সমাজ ভেদাভেদের অংশ ছিল।

উদাস্থিত-ব্যঞ্জন, চাণক্য, কৌটিল্য, Arthashastra, Kautilya, Kautilya’s Arthashastra




চাণক্যের অর্থশাস্ত্রমতে সমাজের নানা ক্ষেত্রে কারা কোন ধরনের কাজ করবে সেখানেও ছিল সুস্পষ্ট নিয়ম। রাজার অধীনে সবকিছু থাকলেও কাজের ধরন নির্ধারিত হত সেই ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং তার ভাবনার উপর।

চতুরাশ্রমের সবচেয়ে উচ্চ প্রথা অর্থাৎ সন্ন্যাস প্রথা সাধারণত গ্রহণ করতেন সমাজের উচ্চ স্তরের মানুষরা। কিন্তু অনেকেই পরিবারের চাপে বা কোন পরিস্থিতির শিকার হয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করতে বাধ্য হতেন। পরবর্তীকালে এমনটা দেখা গেছে যে নানা কারণে তারা এই সন্ন্যাসের পথ থেকে সরে এসেছেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর নিয়ম-কানুন এবং তার নানা বিষয় অনুসরণ করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু একবার সন্ন্যাস গ্রহণের পর তার নিয়ম-কানুন অনুসরণ না করলে ভয় ছিল সমাজচ্যুত হওয়ার।

চাণক্যের অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী, যাঁরা অতীতে সন্ন্যাস নামের চতুর্থ আশ্রম অবলম্বন করেও তা ধরে রাখতে পারেননি, তারাই এই উদাস্থিত-ব্যঞ্জন নামক বিশেষ ধরনের গুপ্তচর বাহিনীর অংশ হতে পারেন।

তবে শুধুমাত্র সন্ন্যাস নামের এই চতুর্থ আশ্রম অবলম্বন করে তা ধরে রাখতে না পারলেই গুপ্তচর হওয়া যেত না, প্রয়োজন ছিল বিশেষ জ্ঞানের। অর্থশাস্ত্র মতে সন্ন্যাস গ্রহণ করার পর তা ধরে রাখতে না পারলে পরবর্তীকালে তাদের গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করার কথা তখনই ভাবা হতো যখন তাদের পর্যাপ্ত প্রজ্ঞা ও জ্ঞান থাকতো। রাষ্ট্র তাদের যেখানে অবস্থান করার নির্দেশ দিত সেই অঞ্চলে অবস্থান করতে রাজি হতে হত তাঁদের। রাষ্ট্রের কথামতো গুপ্তচরবৃত্তি করতে হতো সেই সমস্ত মানুষদের। এমনকী রাষ্ট্র যে কাজ তাঁদের অর্পণ করত, সেই কাজ মেনে নিতে হত তাঁদের।

এই বিশেষ ধরনের গুপ্তচরদের বলা হত উদাস্থিত-ব্যঞ্জন। এঁরা নিজেদের কাজের প্রতি সাধারণত সৎ থাকতেন। রাজা এঁদের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক থাকতেন।

তবে অর্থশাস্ত্রমতে একবার কোনো একটা পথ থেকে সরে আসা মানুষদের বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে অস্বস্তি কাজ করতো রাজার গুপ্তচর নিয়োগকারী সংস্থার। তবে এই ধরনের গুপ্তচরদের সাধারণত দলগত কাজ দেওয়া হতো।

তবুও অর্থশাস্ত্রমতে এবং ইতিহাসবিদদের মত অনুযায়ী উদাসিত ব্যঞ্জন গুপ্তচররা নিজেদের কাজের প্রতি সৎ ও স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করতেন সবসময়। তাঁদের গুপ্তচরবৃত্তি  চালাতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।

Comments

Popular posts from this blog

Now You Can Enjoy A 78-Year-Old Paddle Steamer In Kolkata During Puja!

পুজোর গানে উচ্ছ্বসিত সারেগামাপার অনুষ্কা

Dos and Don'ts during Chandra Grahan