জনপ্রিয় স্লোগান কীভাবে এপার বাংলায় বদলে গেল রোগের নামে?
‘জয় বাংলা’! একাত্তরে এই ধ্বনিতে কেঁপে উঠেছিল সারা বাংলা। রিফিউজি কলোনির অন্দর থেকে একেবারে খাস কলকাত্তাইয়া ড্রইংরুম-সক্কলকে কাঁদিয়ে ছেড়েছিল। তবে এক অন্য কারণে। ২০২৩-এ আবার সে জানান দিচ্ছে ‘এসেছি ফিরিয়া’। আবার বাংলা ‘জয় বাংলা’র কবলে।
করকর করছে চোখে। এমন ব্যথা যে তাকানো যায় না। ঝাপসা দৃষ্টি। তাকালে মনে হয় যাই দেখছি জলকাচের ওপার থেকে দেখছি। এসব লক্ষণে সে জানান দিচ্ছে ফিরে এসেছে কনজাংটিভাইটিস। বাংলায় তার নাম জয় বাংলা। অনেকে বলেন চোখ ওঠা। ব্রিটিশ ভাষ্যে ‘পিঙ্ক আই’ মানে গোলাপী চোখ। শুনলেই মনে পড়ে যায় মহম্মদ রফির ‘গুলাবী আঁখে’ গান খানা। তবে প্রেমিকার চোখ যদি ভাইরাসের আক্রমণে গোলাপি হয় সে চোখ বেশ রিস্কি।
কিন্তু কনজাঙ্কটিভাইটিসের নাম কেন এ বঙ্গে জয় বাংলা হল?
সেই উত্তর পেতে পেলে ফিরে যেতে হবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দিনে। সেই সময় ‘জয় বাংলা’ ছিল জনপ্রিয় স্লোগান। মানুষের মুখে মুখে ফিরত। সেই স্লোগান কীভাবে বদলে গেল রোগের নামে? শোনা যায় ইয়াহিয়া খান তখন বাঙালিদের রক্তচক্ষু দেখাচ্ছিলেন। কনজাঙ্কটিভাইটিস হলেও চোখ লাল হয়ে যায়। সেই সূত্রেই মানুষের মুখে মিলে যায় দুটি বিষয়। অসুখ পায় একটি নতুন নাম।
মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছিল কনজাংটিভাইটিস। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা শরণার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল।
সেই সময়ে প্রকাশিত সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি হিসাবেই প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ চিকিৎসা করিয়েছিলেন কনজাঙ্কটিভাইটিসের ।
পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে স্কুল বন্ধ ছিল, ট্রেন চালক আর গার্ডদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় রেল চলাচল ব্যহত হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে পশ্চিমবঙ্গে আসা বেশ কিছু বিদেশী সাংবাদিকও কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সম্ভবত সেকারণেই নিউ ইয়র্ক টাইমসও এ নিয়ে প্রতিবেদন বের করা হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থী শিবিরগুলি থেকেই পশ্চিমবঙ্গে চোখ ওঠা রোগটি ছড়িয়েছিল বলে মনে করা হলেই ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের মতো প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা গবেষণাপত্রসহ একাধিক জার্নাল থেকে জানা যায় ১৯৭১ সালে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই রোগটি ছড়িয়েছিল। উত্তর প্রদেশের লখনউতে সে বছর কনজাংটিভাইটিসকে মহামারি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
Comments
Post a Comment