ঝোড়ো ব্যাটিং আর গোয়েন্দাগিরি দুটোতেই তুখোড় ডাকাবুকো কলাবতী চেয়েছিল স্পোর্টস জার্নালিস্ট হতে

 আনন্দমেলার পাতায় প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাসটা। একজন ডাকাবুকো, ছকভাঙা মেয়ে খেলাকে ভালবাসত।ক্রিকেট খেলাকে ভালোবেসে সে সমস্ত গণ্ডি অতিক্রম করেছিল। মেয়েটা সাহসী, ডাকাবুকো। নারীসুলভ কোমলতা নেই তার মধ্যে। ক্রিকেট খেলায় সে পারদর্শী। মেয়েদের ক্রিকেটে বাংলার হয়ে খেলেছে সে। বনেদি জমিদার পরিবারের মেয়েটা ছোটবেলাতেই মাকে হারিয়েছিল। বাবা সন্ন্যাসী হয়ে যায়। মাসির সঙ্গে সে পুনেতে এসেছিল। তবে তার ভাগ্য ছিল অন্য কোনখানে। দশ বছর বয়সে এই মেয়েটা কলকাতায় দাদু রাজশেখর সিংহ এবং কাকা ব্যারিস্টার সত্যশেখর সিংহর কাছে ফিরে আসে।




আসলে কিশোরী মেয়েটাকে যে ছক ভাঙতে হতো। অন্য মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণার নিদর্শন হতে হতো। খুব সহজেই মেয়েটা ছক ভেঙে বেরিয়ে আসার কথা ভাবতে পেরেছিল। তবে পথটা সহজ হয়েছিল পরিবারের সহযোগিতার কারণেই।

মেয়েটার নাম কলাবতী। কলাবতী সিংহ। ছোটদের প্রিয় কালু দিদি। কাঁকুড়গাছি উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী মেয়েটা । মেয়েটা ক্রিকেট খেলায় দক্ষ এবং আগ্রহী। দাদু রাজশেখর সিংহের প্রবল উৎসাহ ছিল নাতনীকে ক্রিকেট খেলা শেখানোর। কন্যা সন্তান হলেও পরিবারের পঞ্চম প্রজন্মকে ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি করতে দাদুর রাজশেখর সিংহ সর্বদা এগিয়ে এসেছিলেন।

মতি নন্দীর লেখা কলাবতী সিরিজের প্রথম উপন্যাস বেরিয়েছিল পূজা বার্ষিকী আনন্দমেলায়। উপন্যাসের পাতায় বন্দী থাকেনি কলাবতী। খুব সহজেই সে সাহিত্যের পাতা থেকে বেরিয়ে একেবারে পাশের বাড়ির কিশোরী হয়ে উঠেছিল। শুধু তাই নয় মেয়েরা কিভাবে সব দিক থেকে ছক ভাঙতে পারে কলাবতী ছিল তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

বংশগত মানমর্যাদাকে কেন্দ্র করে দুই জমিদার পরিবারের ঝগড়া, এই ছিল কলাবতীর উপন্যাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এই জমিদার পরিবারের বংশগত মানমর্যাদাকে কেন্দ্র করে যে লড়াই চলত তার প্রতিফলন ঘটেছিল দুই জমিদারির মধ্যে হওয়া একটা বার্ষিক ক্রিকেট ম্যাচে। দুই পরিবারের সম্মান রক্ষার লড়াইয়ের এই ম্যাচে কলাবতী এগিয়ে এসেছিল খেলতে। পরিবারের সমর্থনেই কলাবতী এগিয়ে আসে। কিন্তু বিপরীত পক্ষ কিছুতেই কোন মেয়েকে এই খেলায় অংশগ্রহণ করতে দেবে না। কলাবতী ছাড়ার প্রার্থী ছিল না। স্থানীয় এম.এল.এর ছেলেকে বুঝিয়ে-সুজিতের আপাদমস্তক নিজেকে টুপিতে ঢেকে ছেলে সেজে নিজের পরিবারের হয়ে ব্যাট ধরেছিল কলাবতী। তারপর ওই অঞ্চলের জমিদারিকে জিতিয়ে নিজে ঝোড়ো ব্যাটিং করেছিল কলাবতী।

ক্রিকেট এবং জমিদার পরিবারের লড়াই সব মিলিয়ে-মিশিয়ে সুখপাঠ্য এই উপন্যাস। মতি নন্দীর সহজ, সরল ভাষা অভিনব চিন্তাভাবনা কলাবতীকে সাহিত্যগুণে সমৃদ্ধ করেছিল। তবে এই কলাবতীর চরিত্রটা শুধুমাত্র সাহিত্যের পাতায় বন্দী ছিল না। খুব সহজেই কিশোর-কিশোরী পাঠক-পাঠিকাদের মন জয় করেছিল কলাবতী। কোথাও ছকভাঙা মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল। তবে শুধু কিশোর-কিশোরী নয়, সকল বয়সের পাঠকদের কাছেই কলাবতী সাহসের উদাহরণ। নিয়মের গণ্ডি ভাঙতে যাদের অন্তর সায় দেয় না, কলাবতী আসলে সেই দড়ির টান যা গণ্ডি ভেঙে একটা দিশা রচনা করতে শেখায়।

Comments

Popular posts from this blog

Ravindra Jadeja vs Shakib Al Hasan Comparison: Who is the Better All Rounder? Check ODI and World Cup Stats

দুবাইয়ে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী

কীভাবে বুঝবেন আপনার ত্বক কম্বিনেশন কিনা?